✍️সাত ভাই চম্পা (বিষ্ণু দে)

 


সাত ভাই চম্পা 

                                             বিষ্ণু দে

                   {কাব্যগ্ৰন্থ - সাত ভাই চম্পা (১৯৪৫)}


১)"চম্পা! তোমার মায়ার অন্ত নেই" - চম্পার মায়ার অন্ত নেই কেন?

উঃ- কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় 'চম্পা' অর্থাৎ চাঁপা ফুলের কথা বলা হয়েছে। যার আবির্ভাব বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে। যে যন্ত্রণা, যে কষ্ট সহ্য করে চম্পার জন্ম হয়েছে তা সত্যিই স্বপ্নাতীত। গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে চাঁপা ফুলের আগমন হলেও তার গন্ধে যেমন সারা পরিবেশ সুরভিত হয় এবং মায়ায় ভরে ওঠে, সেই প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করেই কবি এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন।


২)"কত-না পারুল-রাঙানাে রাজকুমার 

কত সমুদ্র কত নদী হয় পার!" - তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

                           অথবা

"বিরাট বাংলা দেশের কত-না ছেলে

অবহেলে সয় সকল যন্ত্রণাই" - তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

উঃ- কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় 'চম্পা' অর্থাৎ চাঁপা ফুলের আগমনকে কেন্দ্র করে পারুল রাঙানো রাজকুমার বা বাংলাদেশের ছেলেদের জীবন যন্ত্রণার ছবিটি কবিতার ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে যেমন চম্পার আবির্ভাব হয় ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে পারুল রাঙানো রাজকুমার সমুদ্র পার হয় আবার বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাও প্রবল কষ্টে দুঃখ যন্ত্রণা সহ্য করে নিজেদের জীবন যন্ত্রণাকে জয় করে জীবনের পথে এগিয়ে যায়।


৩)"চম্পা, তােমার প্রেমেই বাংলা দেশ 

কত-না শাঙন রজনী পােহাল বলাে।" - "শাঙন রজনী" শব্দের অর্থ কি? কারা কিভাবে শাঙন রজনী পোহাল?

উঃ-কবি বিষ্ণু দে রচিত সাত ভাই চম্পা কবিতায় উল্লেখিত "শাঙন রজনী" শব্দের অর্থ হলো শ্রাবণ মাসের রাত।

∆ চম্পার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে বাংলার কত নর-নারী শ্রাবনের রাত কাটিয়েছে। অতীতে উল্লেখিত সাত ভাই চম্পার রূপকথার গল্পের কথা আমরা সকলেই জানি। আর এই গল্প শোনাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের বহু নর-নারী নিজেদের রাত অতিক্রম করেছে।


৩)"গৌরীশৃঙ্গ মাথা হেঁট টলােমলাে," - 'গৌরীশৃঙ্গ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?তার মাথা হেঁট টলোমলো কেন?

উঃ- বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় উল্লেখিত 'গৌরীশৃঙ্গ' বলতে হিমালয়ের সুউচ্চ চূড়া এভারেস্টের কথা বলা হয়েছে। 

∆ চম্পা আসলে শুভ তথা মঙ্গল, আলোর প্রতীক। যার শুভাগমনে এভারেস্টের মতো সুউচ্চ পর্বতেরও মাথা টলমলে হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে যখন চম্পার আবির্ভাব হয় তখন তার সৌরভে পাহাড়-পর্বত সবকিছুই মাথা নত করে। এই প্রসঙ্গেই উক্তিটির অবতারণা।


৪)"নিষিদ্ধ দেশে দীপঙ্করের শিখা" - নিষিদ্ধ দেশ বলতে কোন দেশকে বোঝানো হয়েছে? দীপঙ্করের শিখা কি?

                      অথবা

"চিনে জ্বলে, হয় মঙ্গোলিয়ায় লেখা, 

চম্পা, তােমায় চিনেছিল সিংহলও।" - চিন, মঙ্গোলিয়া,সিংহল কীভাবে চম্পাকে চিনেছিল?

উঃ- বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় 'নিষিদ্ধ দেশ' বলতে তিব্বত দেশের কথা বলা হয়েছে। 

∆ 'দীপঙ্কর' অর্থাৎ বাংলার ছেলে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের কথা কবিতায় উল্লেখ রয়েছে। যার জ্ঞানের আলোয় শুধুমাত্র তিব্বত নয় চীন, মঙ্গোলিয়ার মতো দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি বিজয় সেনের সিংহল অভিযান দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। শুধুমাত্র বাংলায় নয় চম্পার ক্রিয়া-কলাপ সারা পৃথিবীময় বিরাজমান। এই প্রসঙ্গেই উক্তিটির অবতারণা।


৫)তােমাকে খুঁজেছে জানাে কি কৃষকে নৃপে 

অশ্বের খুরে, লাঙলের ফলা টেনে, 

হাতুড়ির ঘায়ে, কান্তের বাঁকা শানে, " - কে কাকে খুঁজেছে? তাকে খোঁজার কারন কি?

উঃ- কবে বিষ্ণুপুর রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় 'তোমাকে' বলতে চম্পার কথা বলা হয়েছে।

∆ বাংলায় প্রচলিত 'সাত ভাই চম্পা' রূপকথার গল্পে বাঙালি ধর্ম-কর্মের যোগসুত্র প্রাচীন। কৃষকের নৃপে অর্থাৎ কাস্তে থেকে হাতুড়ি সমস্ত কিছুতেই চম্পার ত্যাগ, সহনশীলতা, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যে যাত্রা ,সেই যাত্রাতেই যেন মুখরিত।তাই সকলেই চম্পাকে খুঁজে বেড়িয়েছে।


৬)"ভাটিয়ালি গানে, কপিলমুনির দ্বীপে; 

কলিঙ্গে আর কঙ্কণে গুর্জরে" - ভাটিয়ালি কি? কলিঙ্গ ও গুর্জর দেশে  চম্পাকে খোঁজে কেন?

উঃ-কবি বিষ্ণু দে রচিত সাত ভাই চম্পা কবিতায় 'ভাটিয়ালি' অর্থাৎ মাঝি-মাল্লাদের গানের কথা বলা হয়েছে।

∆'সাত ভাই চম্পা' রূপকথার গল্প শুধু বাংলাতেই নয় কপিলমুনির কলিঙ্গদেশে, কঙ্কন গুর্জর দেশসহ বহু স্থানে প্রচলিত। আরে রূপকথার গল্পকে কেন্দ্র করেই কবিতায় চম্পার মায়ার অবতারণা করা হয়েছে। এই মায়ার বশবর্তী হয়েই সকলেই চম্পাকে খুঁজে বেড়ায়।


৭)"শ্যাম-কাম্বােজে তারা বুঝি টানে দাঁড়,

নীল-কমলের দেশে রেখে আসে হাড়" - কারা শ্যাম-কম্বোজে দাঁড় টানে? নীলকমলের দেশ বলতে কোন দেশকে বোঝানো হয়েছে?

উঃ- কবি বিষ্ণু দে রচিত 'সাত ভাই চম্পা' কবিতায় উল্লেখিত শ্যাম কম্বোজ বলতে যেসব বাঙালিরা বাণিজ্যতরী নিয়ে ব্যবসা করতে গেছে তাদের বাণিজ্যতরী বয়ে চলার কথা এখানে উল্লেখিত হয়েছে।

∆ 'নীলকমলের দেশ" বলতে সাত ভাই চম্পা উল্লেখিত রূপকথার দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে রাজপুত্র নীল কমল রাক্ষসীর ছেলে হলেও সৎভাই লাল কমলকে নিয়ে রক্ষস-খোক্কসসহ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে এবং জয় লাভ করে।


৮)"বহু চাঁদ বহু শ্ৰীমন্ত সদাগর, 

চম্পা, তােমারই পারুল মায়ার লােভে 

বাহিরকে ঘর আপনকে করে পর"-চম্পার মায়ায় পড়ে চাঁদ সওদাগর ও শ্রীমন্ত সদাগরের মত ব্যক্তিদের বাহিরকে আপন করার কারণ কি?

উঃ-কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় চাঁদ সওদাগর, শ্রীমন্ত সদাগর চম্পার মায়ায় শ্যাম- কম্বোজ দেশে যাত্রা করেছে। রূপকথার গল্পে উল্লেখিত ধন-সম্পদের লোভে পড়ে তারা তাদের বাণিজ্যতরী নিয়ে বিদেশ যাত্রা করেছে এবং দেশের নাম গৌরবান্বিত করেছে। তারা ঘরকে পরে করে বাহিরকে আপন করে নিয়েছে।


৯)কলিঙ্গ,কোঙ্কন,গুর্জর দেশগুলির বর্তমান নাম কি?

উঃ-কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় উল্লেখিত কলিঙ্গ দেশের বর্তমান নাম উড়িষ্য,কোঙ্কন দেশের বর্তমান নাম গোয়া এবং গুর্জর দেশের বর্তমান নাম গুজরাট।


১০)"বলী হাসে, আসে যবদ্বীপের সাড়।"- বলী দেশের বর্তমান নাম কি?যবদ্বীপের বর্তমান নাম কি?

উঃ-কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় উল্লেখিত 'বলী' দেশের বর্তমান নাম ইন্দোনেশিয়া।

∆ যবদ্বীপের বর্তমান নাম জাভা দ্বীপ।


১১)"এ কোন হিরণমায়ায় রেখেছ ঢেকে"- কে কাকে ঢেকে রেখেছে? সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে কি ফল হয়েছে?

উঃ- কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় উল্লেখিত চম্পা নিজেকে মায়ার আচ্ছাদনে ঢেকে রেখেছে।

∆ রূপকথার গল্পের মত চম্পা নিজেকে সকলের থেকে আড়াল করে রেখেছে। যেখানে সবাই যেতে চাইলেও কেউ যেতে পারে না। যেখানে পৌঁছাতে গিয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে বহু বৈতরণী ডুবে গেছে বহু মানুষকে নিশিতে ডেকে নিয়ে গেছে।

১২)"খুলে দাও মুখ, রৌদ্রে জ্বলুক গান।।" - কার কাছে কবি কেন এই আবেদন?

                      অথবা 

"তবুও তােমায় খুঁজে মরে সারা দেশ/ঘােচাও চম্পা, দুস্থ হন্নবেশ,"- কবির এমন আবেদন কেন?

উঃ- কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা কবিতায়" রূপকথার চম্পার কাছে কবির এই আবেদন।

                           চম্পাকে কল্পনা করে তার কাছে পৌঁছতে গিয়ে যেমন বহু মানুষকে নিশিতে ডেকে নিয়ে গেছে, বহু বৈতরণী ডুবে গেছে কিন্তু তা সত্বেও কেউই চম্পার খোঁজ পায়নি। তাই চম্পার কাছে কবির আবেদন সে যাতে ছদ্মবেশ ঘুচিয়ে সবার সামনে এসে দেখা দেয়, তাহলেই সবাই তীব্র সুখ পাবে এবং মুক্ত হবে।

১৩)"মুক্তি! মুক্তি! চিনি সে তীব্র সুখ,"-কারা কিভাবে মুক্তি পাবে বলে কবি মনে করেছেন?

উঃ-কবি বিষ্ণু দে রচিত "সাত ভাই চম্পা" কবিতায় যারা সমস্ত কিছু ভুলে চম্পাকে খুঁজে বেড়িয়েছে ,তারা কড়ির পাহাড়েও তার হদিশ পায় না এমনকি কাঞ্চনমালা তার হদিশ জানেনা। তাই কবি চম্পার কাছে আবেদন করেছে সে সমস্ত ছদ্মবেশ ঘুচিয়ে যেন সকলের সামনে এসে ধরা দেয়। তাকে পেয়েই সকলের মুক্তি ঘটবে বলেই কবি মনে করেছেন।


✍️আলোচক - সুদীপ রায়


এস এস সি পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী সমস্ত নোটসের পিডিএফ (১০৫টি- সাহিত্যের ইতিহাস, সাহিত্যর রূপরীতি, অনুবাদ অনুষঙ্গ) 

মূল্য - ৪০০/-

যোগাযোগ - ৭২৭৮৭৫১৯৮৭

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🌷বৃন্দাবন দাস (এস এস সি )🌷

🍁মালাধর বসু (ভাগবতের অনুবাদক )🍁

🎯 রামপ্রসাদ সেন সমগ্ৰ🎯